Hello Testing

4th Year | 2nd Issue

৩১শে বৈশাখ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | 15th May, 2023

প্রচ্ছদ কাহিনী, ধারাবাহিক গদ্য, ছোটোগল্প, গুচ্ছ কবিতা, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, স্বাস্থ্য, ফ্যাশান ও আরও অনেক কিছু...

শারদ অর্ঘ্য ১৪২৮ ।  গুচ্ছ কবিতা 

অ নি ন্দ্য   রা য়

কৃষকবাড়ি

সে ছিল সব্জির খেতে পড়ে-থাকা অযৌন প্রতীক  

বালকেরা খেলাচ্ছলে তাকে নিয়ে মাঝামাঝি চিরে

করেছে খাদ্যের মতো লোভনীয়, আরও ক্ষুদ্রতর  

মাতৃকার কায়াকল্পে প্রান্তরের উজ্জ্বলতা জাগে  

 

কৃষকবাড়িতে যে যে বিড়ম্বনা ঘটে অধিকাংশ

জমিতে, চারার ফাঁকে পুঁতে দিলে মিটে যায় ঠিক

পতঙ্গ পোষেন তাঁরা, রীতিমতো প্রশিক্ষিত করে  

ছেড়ে দেন ক্রিয়াকর্মে, উড়ে যায় পরাগে পরাগে

 

আমিও নিয়েছি অংশ, লোকাচারে কনিষ্ঠ শরিক

আমিও স্ত্রী-গাছ খুঁজে ডিএপির বস্তা ফুটো করে  

ঢেলেছি গোড়ায় খুব, কাদাজলে নগ্ন আকরিক   

চকচক করেছে আর প্রাণে প্রাণে মিশে গেছে জড়

 

তুমিও ক্ষুধার দলে এলেবেলে, স্থানীয়, অস্ট্রিক

মাঠ থেকে ফিরে এসে নিজহাতে মুণ্ডচ্ছেদ করো   

 

ডুব

সতেরো বছর হলে পুষ্করিণী আত্মীয়ার নাম  

মনে হয়; সাঁতারের সুযোগে অনেক আলোড়ন

সহ্য করতে হয় বোবা পুতুলের মতো ব্যথাহীন

সাদা রবারের মতো উত্তেজনাপ্রবণ অথবা

 

প্রতিটি ডুবের আগে বড়ো করে শ্বাস নিতে হয়

চোখ বন্ধ হয়ে আসে এত ভালো জলের আরাম  

খিদে পায়, তেষ্টা পায়, ঠোঁট একটু হয়ে পড়ে ফাঁক

অপূর্ব নরম গোল মুখে ঢুকে করে দেয় বোবা

 

সে চুষতে শুরু করে, মনে পড়ে জননীর স্তন

যখন আড়াই মাস তাকে ফেলে চলে গেছে দূরে

অন্য মরদের সঙ্গে, সে মরদ আকাশের তারা

আজ পুকুরের মধ্যে স্পর্শ পাচ্ছে মায়ের যেন বা

 

দারুণ আয়েসে খায়, পেট ভরে, তারপর বিশ্রাম

নিতে আত্মীয়ার কোলে ঘুমিয়ে রয়েছে আজীবন    

 

চোর

প্রবল হল্লার মধ্যে ধরা পড়ে রোগাভোগা চোর

সবেমাত্র সন্ধে, জানলা দিয়ে হাত প্রবল সাহসে

ঢুকিয়ে টেনেছে হার মূক বধূটির গলা থেকে

তক্ষুনি কঁকিয়ে উঠে কী কাণ্ড বাঁধাল মেয়েটিও

 

জড়ো হয় লোকে, চেপে ধরে, শুরু হয় মার

ভিড়ের ভেতরে ক্ষুর বার করে বাবু গুলিখোর

না, কণ্ঠে না, এলোমেলো মাথায় চালায়, কাটে চুল

অন্যেরা কুলকুলি দেয়, ঢেলেছে পাঁচচুলা করে ঘোল 

 

পিটুনি চলতে থাকে, লাথি, ঘুষি, সহস্র থাপ্পড়

“আমি কুছু করি নাই” বলে আর পালানোর চেষ্টা

করে ছেঁড়া প্যান্ট, ছেঁড়া গেঞ্জি, ফাঁদে পড়া নটবর   

প্রচণ্ড মারের চোটে শিরদাঁড়া বাঁকিয়ে করে গোল 

 

হাঁটুতে নিজের মাথা গুঁজে যেন প্যাঁকাটি কিশোর

মাতৃগর্ভে ভাসে, সব প্রহার এখন সহনীয়        

 

বটের নীচে

কেবল অস্ত্রের কথা লিখে রাখি বটের পাতায়

নিজের আঙুল কাটি, সর্বত্র ছড়াই রক্তফোঁটা

আর যথাসাধ্য লাল হয়ে ওঠে ফলেরা, মাটিতে  

পড়ে ছেৎরে যায়, দেখি শ্বেতকণিকার মতো বীজ

 

কেবল অস্ত্রের নীচে কথাদের বুঝিয়েসুঝিয়ে 

শোয়াই, প্রত্যেক কোপে সরলতা তাদের ফাটায়

ভালোমন্দ ছিটকে পড়ে, শিরার ভেতরে ওঠে ঢেউ 

অণুচক্রিকার মতো অভিপ্রায় বেঁধেছে তাবিজ

 

এতসব বলছি কেন? কেন বলছি? এর চে নিশীথে

প্রেমের কবিতা পড়া স্বাস্থ্যকর, বালিশের পাশে

একফর্মার বই রেখে ঘুমনোর আগে দেখা ভালো

হরফের ফাঁকে ফাঁকে শূন্যস্থান নিবিড়, গিজগিজ 

 

নিসর্গে বটের নীচে ঝুপড়ি বেঁধে চাতুরি সহায়       

তোমাকে সঙ্গিনী ভেবে কেন মুখ ঘষেছি সংগীতে

 

বুলেভার্ড

বিস্মৃতির বুলেভার্ড, গাছেরা নিজের মতো গূঢ়

যে শকটে গেছিলাম আজ তার জ্বালানি না পেয়ে

ভেবেছি হেঁটেই যাব, সরলবর্গীয় মুখ, হাসি

আধো বুজে আসা চোখ— যদি কিছু মনেটনে পড়ে

 

অথবা স্পর্শের ঠিক আগের মুহূর্তে থেমে থাকা

এসব কি ঘটেছিল? ঘটেনি? হতে তো পারত, বলো   

কোনও আশ্বিনের ভোরে একই পথে দুজন মানুষ

উল্টোমুখে হেঁটে যাচ্ছে রোদ আর মেঘের শহরে    

 

অথবা বিকেল শেষে গান করছে পাগল বেসুরো

তাকে কিছু বলতে গিয়ে থমকে আছে সাঁঝের বলাকা  

এসবের মধ্যে আমি কখনও কি ছিলাম? ছিলামই না!

ভুলে গেছি, ভুগে ভুগে একান্ন বছর ধরে জ্বরে     

 

এবারে হেঁটেই যাব, যতদূর মিনারের চুড়ো  

যদি হয় পুনরায়… দেখাশোনা, শরীর, পতাকা   

 

স্নানাগারে

কী কুক্ষণে তাকে ভেবেছিলাম হামাম, সেই ভুলে

ঢোকা মাত্র খুলে ফেলি পোশাক, স্নানের লালসাকে

কোমরে জড়িয়ে আরও কয়েক পা এগিয়ে দাঁড়াই

জল খুঁজি ইতিউতি, খুঁজি জলে ভ্রষ্টাচার, সুখ

 

আর সাবানের সত্তা ক্ষয়ে যায় সর্বান্তকরণে

কী কুক্ষণে তাকে মেখেছিলাম পা-হাতে, মুখে, চুলে

অথচ চৌবাচ্চা ভরে সে রাখতে পারেনি ততদিনে

আমাকে বলেছে, “ভিজতে চায় যারা এমনই ভিজুক”

 

আমিও সংকোচে, ভয়ে তার পৃষ্ঠে ছুঁয়েছি আঙুলে

আর সেও হ্যাঁচকা মেরে টেনে নেয় নিজের গভীরে

সংজ্ঞা পুরো খসে যায়, ঢুকে পড়ি আঁধারের মূলে

জল বেরনোর নল করেনি তো এখনও সারাই

 

ফলত খটখটে-প্রায়, স্নানের অযোগ্য, তাকে ছুঁলে

তেষ্টা চেপে ধরে গলা, ঝরে পড়ে রুক্ষতার ছাই     

 

পুকুরে

যতটা পুকুর চিনি তার থেকে হাঁসেরা গভীর  

তাদের পায়ের ছাপ কাদাকেও শিল্প বানিয়েছে

যতটা হাঁসের কারু আরও কিছু পালকের দায়

কখনও সুষমা দেয়, আবার কখনও নষ্ট করে

 

অথচ মাংসের জন্য জনগণ বেরিয়ে এসেছে   

অথচ ডিমের জন্য পুকুরের পাড়ে এত ভিড়

সেখানে বাল্যের মতো সরল দুখানি চোখ, দেখি

সহসা আমাকে ডাকে ইশারায় ঘাটের পাথরে

 

যদি মাথা ঠুকে যায়, মনোবাঞ্ছা পিছলে যদি যায়

ভেবে মুখ ঘুরিয়ে নি, মিশে যাই লোকের আড়ালে

সুযোগে অপর কেউ ডাক দেয়, “চই, চই, চই”

মুহূর্তে সানাই বাজে, উলুধ্বনি ওঠে আড়ম্বরে

 

যতটা পুকুর চিনি তার বেশি বিরহ কবির

হাত থেকে পড়ে ভাঙে কুসুমে হরিদ্রা সমুদায়  

 

ভোরে

এখনও চাঁদের টুকরো দেখা যায় দূরের আকাশে

তাকে কেউ নিয়ে এলো ডোবার কিনারে, এনে জলে

ফেলে পরিষ্কার করে, মাজে অল্প মাটি দিয়ে স্নেহে

আমিও দূরের থেকে উত্যক্ত করেছি ঢিল ছুড়ে 

 

আমিও দূরের থেকে ঢিল ছুড়ে ভাবি যদি ভাঙে

এতটা কাচের, এত বাসনের মতো পড়ে ঘাসে    

ঝনাৎঝন শুনে যাই কিছুটা এগিয়ে, গিয়ে দেখি

ফোটনের গুঁড়োগুঁড়ো ছড়িয়েছে জলতল জুড়ে 

 

কুড়োতে যাব যে রোদ কাছে এসে লাফায় উচ্ছ্বাসে  

বিকট চিৎকার করে, ভয় পেয়ে সভয়ে দাঁড়াই

পরিচারিকার আর দেখাটেখা নেই আশেপাশে

সে তবে সর্বস্ব নিয়ে ফিরে গেছে নিজের অঞ্চলে!

 

ঘাসের ডগায় যা যা চকচকে চাঁদের কিছু না সে?

তার কিছু কণা পেলে বদলে যেত অবস্থা তাহলে

আরও পড়ুন...