উ জ্জ্ব ল পা ঠ । পর্ব ৪
১
নতুন লিখতে এসে আমাদের মধ্যে একটা স্পর্ধা কাজ করে। এই স্পর্ধা হল দ্রুত ‘rejection’-এর স্পর্ধা। কোনো কবির দু-চারটে কবিতা পড়ে ভালো না লাগলেই বাদ দাও। একজন পাঠক তখনই সৎ ও সাহসী হয়ে ওঠে যখন সে ‘Reject’ করতে পারে। কিন্তু মুশকিল হল আমরা কোন লেখাকে ‘Reject’ করছি, কেন ‘Reject’ করছি তা নিজের কাছে স্পষ্ট থাকা ভীষণ জরুরী। সম্ভবত ২০১৫ বা ২০১৬ সাল হবে— চাপড়া বইমেলায় একটি হলুদ মলাটের কবিতার বই দেখে কিনি। কিন্তু মুশকিল হল— কিছুদিন পর বইটা খুলে পড়তে গিয়ে মনে হল টানছে না। বইটা আলমারিতে তুলে রাখলাম। সেই সময়টা এমন ছিল দ্রুত কাউকে গ্রহণ করছি বা দ্রুত কাউকে বর্জন করছি। কবিতাপাঠ ক্রমশ একমুখী হয়ে উঠছে। উৎপল, অমিতাভ, শ্যামল গ্রাস করছে।
মাঝে অনেকটা পথ পেরিয়ে গেছে। নিজের কবিতাপাঠ বা ন্যূনতম বোধেরও পরিবর্তন হয়েছে। নিজের গ্রহণ-বর্জনের মধ্যেও তৈরি হয়েছে অজস্র সরু সরু গলি। কবিতালেখক হিসেবে আমার নিজেরও যেমন কোথাও পৌঁছানোর আছে। আমি অন্যের কবিতা পড়ে আসলে নিজের পথ-ই খুঁজছি। সবসময় সদরপথ যে আমার গন্তব্যের রাস্তা তা তো নয়। সরু সরু গলির মধ্যে ঢুকেও পাওয়া যায় মানুষের সখ্য, বাড়ির ছায়া, কম পথকষ্ট… তা অনুধাবন করা দরকার।
কবি সুমিতেশ সরকার রাণাঘাটে থাকতেন। ১৯৯২ সালের দিক থেকে এই কবি লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৯৪ সালে ‘শুভেচ্ছা মমিঘর ছুঁয়ে’ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ পায়। নব্বইয়ের এই কবি একজন দিল-খোলা মানুষ ছিলেন। পরনে পাজামা-পাঞ্জাবি, চোখে মোটা চশমা আর কাঁধে একটা ঝোলানো ব্যাগ নিয়ে মাঝেমাঝে রাণাঘাট স্টেশনের পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মে বন্ধু গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আড্ডা দিতেন। ঝোলা থেকে বার করে কখনো নিচু স্বরে, কখনো উঁচু স্বরে শোনাতেন কবিতা। কবিতা নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কর্কট রোগ কবির ওপর এমনভাবে থাবা বসায়… আর রক্ষা পাননি… অকালে চলে যান… তবে আমাদের জন্য রেখে গেছেন তাঁর কবিতা। কবিতা না বলে বলা যায় আত্মচিৎকার। যে চিৎকার কানের ভিতর কণ্ঠ রোধ করে। আমাদের অনুভবে প্রবাহিত করে তার অনুরণন।
২
লকডাউনের শুরুর দিকে আলমারি থেকে পুরোনো কিছু কবিতার বই বার করে পড়ছিলাম। সুমিতেশ সরকারের ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ও বার করি। শুরু থেকে পড়া শুরু করি। প্রথম কাব্যগ্রন্থের ‘প্রাসঙ্গিক রূপকথার অপেক্ষায়’ কবিতাটি পড়তে গিয়ে আর স্কিপ করে বেরোতে পারি না। ওই পাতাতেই আটকে থাকি। আগে কবিতাটি পড়া যাক—
প্রাসঙ্গিক রূপকথার অপেক্ষায়
প্রকৃত রূপকথায় কোনও যতিচিহ্ন থাকে না…
অবসন্ন ইগলুর ভিতর থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে ঘুমন্ত মেপলপাতার থেকে
ঝরে পড়া শুধু এই ক-টি কথাই আমি শুনতে পাই আজ।
যদিও স্বপ্নগত চকিত দৃশ্যটি মেনে নিলে—
এই রাত্রি, চরাচর নিরর্থক বাদামের মতো মনে হয়, তবু তার অন্ধকার পথে
ইশ্বরের অপেক্ষায় আমি কস্তুরীহরিণীর মতো বসে থাকি…
যতিচিহ্নহীন, নির্বাপিত, একা… তবু কোনও প্রাসঙ্গিক রূপকথার অপেক্ষায়।
সমগ্র কবিতা না, শুধু প্রথম লাইনটি ভাবুন ‘প্রকৃত রূপকথায় কোনও যতিচিহ্ন থাকে না’। কী অমোঘ লাইন! সত্যিই কি রূপকথার কোনো যতিচিহ্ন থাকে? আমরা বরাবর রূপকথার চওড়া কাঁধে ভর করে এগিয়ে যেতে চেয়েছি চেনা-অচেনা নানা পথ। কবি থাকতে চেয়েছেন যতিচিহ্নিহীন, নির্বাপিত, একা। তাই কি কবি শুনতে পান অবসন্ন ইগলুর ভিতর থেকে ঘুমন্ত মেপলপাতা ঝরার শব্দ? নিরর্থক বাদামের মতো থেকে কবি কি শুনতে চেয়েছেন বাদাম ভাঙারই শব্দ? মাথার মধ্যে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। বইটা বন্ধ করে ভাবতে থাকি। আবার বইটা খুলে পড়তে থাকি। তাঁর কবিতার সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম গলিতে আমি আটকে পড়ে ভুলে যাই আমার ফেরার পথ। আমি কি সত্যিই ফিরতে চাই? নাকি তাঁরই ‘মাধবীলতা’কে সরিয়ে তাঁরই সুরে বলতে চাই— ‘আলো বলতে কবিতা/আর অন্ধকার বলতেও কবিতা ছাড়া কেউ নয়।’
একটি পিঁপড়ে
এত নির্জন তোমাকে বোঝান মুশকিল
এত নির্জন তোমাকে বোঝান যাবে না
ধু-ধু শূন্যতা চারিদিকে ঘিরে চুপচাপ
একটি পিঁপড়ে হেঁটে যায়… শুধু হেঁটে যায়
পাতা ঝরবার শব্দ
ক্রমশ একা হয়ে যাওয়া একটা দিন…
ক্রমশ একা হয়ে যাওয়া একটা রাত…
আর ছোটো-ছোটো পাতা ঝরবার শব্দ
ধূসর দেওয়ালঘড়ি থেকে নেমে আসা
অন্ধকার পাতা ঝরবার শব্দ
পুরোনো কথা
পুরোনো কথাগুলোই নতুন করে বললাম আবার
এবং তুমি হেসে উঠলে
আর সূর্যাস্তের দিকে গোধূলিরঙের কয়েকটি পাখি উড়ে গেল।
সূচনাপর্ব
অন্ধকার শব্দটিও কী সাবলীলভাবে উচ্চারণ করো তুমি
যেন কিছুই হয়নি, যেন এ-সমস্তই স্বাভাবিক—
একটা রোগা মোমবাতি একটা পরিত্যক্ত বাতিঘর আর
নিঃসঙ্গতার কিনারে দাঁড়িয়ে থাকা একটা মানুষ…
কাহিনির সূচনাপর্বেই ফোঁটা-ফোঁটা অন্ধকার যাকে ঢেকে দিচ্ছে।
পঁচিশে বৈশাখ
আজ পঁচিশে বৈশাখ
বহুদিন পর, তোমার অন্ধকার লেখার টেবিলে
একটুকরো আলো এসে পড়ছে।
ছবি
ছবিগুলি পারিবারিক অ্যালবামে রাখা থাকবে
তারপর হারিয়ে যাবে, নষ্ট হয়ে যাব একদিন
কেননা— অমরত্ব বলে কিছু নেই, অমরত্ব বলে কিছু হয় না।
খাদক
ভালো কবিতা
পাঠককে একটু-একটু করে খেয়ে ফেলে
যাকে খায়, সে বুঝতেও পারে না
যখন বুঝতে পারে—
তখন আর করার থাকে না কিছুই।
হননদৃশ্য
দুঃখের রঙ সবুজ, ভালোবাসার রঙ নীল
আর একটা স্ট্রবেরি রঙের একটি দুপুর
দূরের ব্যালকনি থেকে হাওয়ায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
শিল্প
ইস্পাতের খাঁচার ভিতর একটি মানুষ—
ইস্পাতের খাঁচার ভিতর একটি বাঘ—
দুজন দুজনকে সন্দেহের চোখে দেখে
কিন্তু তাদের শিল্পিত আচার-আচরণে
এসবের বহিঃপ্রকাশ ঘটে না কখনও।
বাকি জীবনটা
মহাকাব্য নয়,
একটা পাতলা মলাট-ছেঁড়া দশ পাতার বই—
যার সঙ্গে
তুমি বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবে ভেবেছ।
১০টি ছোটো চেহারার কবিতা তুলে দিলাম। এত ছোটো পরিসরে কীভাবে বৃহৎ কবিতা লেখা যায় তার এক অনন্য উদাহরণ কবি সুমিতেশ সরকার। অঙ্কে, মাত্র দুটি বিন্দু দিয়ে আমরা সরলরেখা আঁকি। যতই দীর্ঘ বা ক্ষুদ্র সরলরেখা আঁকি না কেন দুটি বিন্দুরই প্রয়োজন। যার দৈর্ঘ্য ২ সেমি হোক বা ২০০০ সেমি। কবিতার ক্ষেত্রেও অনেকটা তাই। আকার না, ভাবনার বিশালতাই প্রধান। সুমিতেশ সরকার কখনো দীর্ঘ কবিতার দিকে হাঁটেননি। সচেতনভাবেই। তাঁর ভাবনার জগতে নিজেই মহারাজার মতো থেকে শাসন করেছেন প্রতিটা শব্দকে। শব্দের সঙ্গে প্রয়োজনে বন্ধুত্ব করেছেন, প্রয়োজন ছুঁড়ে ফেলেছেন তাকে।
আবার ফিরে আসি প্রথম দিকের কথায়। বইটি যখন আমাকে মোহগ্রস্ত করতে পারছিল না, সেই সময়ের কথায়। সময় আসলে আমাদের চালিত করে তারই শাসন বা অপশাসনে। তাই হয়তো আমরা বৃষ্টির মধ্যে শুনতে পাই না বৃষ্টি পড়ার শব্দ। রোদের ভিতর দেখতে পাই না রোদের চাঞ্চল্য। আমরা স্বপ্নসন্ধানী মানুষ। রূপকথার গল্পে ভেসে থাকা মানুষ। জলেভেজা, রোদেপোড়া জীবনকে কাছ থেকে দেখার আগেই তার জবজবে গা দেখে দূরে পালিয়ে যাই। জীবনটা আমাদের শিশুর মতোই সরল হবে বলে কবে যে হাড়ভাঙা কোনো বৃদ্ধের অসুখে পরিণত হয় টের পাই না।
সহজের একটা সৌন্দর্য আছে। ‘কথামৃত’ পড়ার সময় আমার বারবার মনে হয়েছে, কেন রামকৃষ্ণ কবি নয়। আমরা অক্ষরের ভিতর বোধের যে দাগ বসাই, রামকৃষ্ণ কথার মধ্যে বারবার বোধের দাগ বসিয়েছেন।
সুমিতেশের সহজ সরল ছোটো ছোটো কবিতাগুলোতে আমাদের সামনে খুলে যায় বিরাট কোনো স্পেস। যে স্পেস শূন্য অথবা ভরাট। যে স্পেসে আমরা পা ছড়িয়ে বসতে চাই। আমরা এলিয়ে দিতে চাই যাবতীয় জীবনের অনুৎপাদিত ফসল।
পড়া যাক সুমিতেশ সরকারের আরও কিছু কবিতা—
শাশ্বত
ডায়মন্ডহারবার রোডের কাছাকাছি যে একটি ধূসর রেস্তোরাঁ আছে
তা আমিও জানতাম।
কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক, সেখানে যাওয়া হয়নি
কখনও।
তার রহস্যময় হাতছানি, আমি উপেক্ষা করেছি এতকাল।
আজ আপনার লেখালেখির ভিতর
এলোমেলো পায়চারি করতে করতে, শাশ্বত—
সেখানে যাবার ইচ্ছে আচমকাই প্রকট হয়ে উঠল।
প্রতিভা
মস্তিষ্কের একটি প্রকোষ্ঠ বন্ধ করে দিয়ে
সাবলীল আর একটি প্রকোষ্ঠ খুলে ফেলবার যে কৌশল
কাউকে খুন করে এসে
ধীর লয়ে সেতার বাজাবার যে কৌশল
উজ্জ্বল আলোসুড়ঙ্গের ভিতর দিয়ে যেতে-যেতে
আচমকা অন্ধকার রচনার যে কৌশল
প্রকৃতার্থে, যে তাহাই প্রতিভা—
সে-বিষয়ে কোনও সংশয় নাই!
সুমিতেশের কবিতা পড়ে বোঝা যায়, তিনি নগরের এক বাউল কবি যিনি নিজের ভিতর গাছপালা লাগিয়ে সে গাছের ছায়াতেই চেয়েছেন সেতার বাজাতে। সেই সেতারের তারে কখনো কখনো কেটে ফেলেছেন নিজের হাত। আবার সাদা ব্যান্ডেজ পরে সেই হাতে বাজিয়ে চলেছেন সেতার। তিনি অন্ধকার রচনার মধ্যে ডুব দিয়ে সাঁতরাচ্ছেন। হয়ত নিজেই জানতেন না, তাঁর পাড় কোথায়। তবুও তিনি নিমগ্ন। অন্ধকারের শরীরকে ক্রমশ সাজিয়ে করে তুলছেন মোহময়ী। তিনি নিজে আচ্ছন্ন না বিচ্ছিন্ন তাও কি জানতেন? নিজের মধ্যে এভাবেই হয়ত পায়চারি করতে করতে খুঁজতেন একটা ‘destination’।
আরও কয়েকটি কবিতা—
শরৎ
পাখির ডাকগুলো মিহি হতে হতে মিলিয়ে যাচ্ছে
স্বপ্নের ভিতর
অস্ফুট বেজে উঠছে টেলিফোন
নীল আকাশের বুক চিরে
উড়ে যাচ্ছে একঝাঁক তিতিরঙের মেঘ
বহুদিন পর, একটা চিঠি এল—
তুমি আমাকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করেছ, শুরুতেই…
একটি বেড়াল, রিংকুমাসি ও কিছু অনিশ্চয়তা
স্তব্ধতার ভিতর দিয়ে একটি বেড়াল চলে যায়
আর আচমকাই রিংকুমাসির কথা মনে পড়ে
ভাবি— তোমার সঙ্গে দেখা হলে এসমস্তই বলব
কিন্তু কবে-কীভাবে দেখা হবে, তার কিছুই জানি না
যেদিন কলকাতায় প্রথম বরফ পড়ল
যেদিন কলকাতায় প্রথম বরফ পড়ল
তোমার কথা মনে পড়ে গেল আমার—
মনে পড়ে গেল— দুটো বরফের পুতুল
একদিন কথা বলছিল এই ভাষায়
যদিও— ‘এই ভাষা’ মানে ঠিক কোন্ ভাষা
তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না আমি
আর বোঝাতে পারব না জেনেও
আজ আমার কোনও দুঃখবোধ নেই, অবসাদ নেই, ক্লান্তি নেই
মনস্তাপ নেই, পিছুটান নেই, খেদ নেই—
দেশপ্রিয় পার্কের একটা আবছা বেঞ্চিতে বসে
আমি এখন পা দোলাচ্ছি
আর গুঁড়ো-গুঁড়ো বরফে ঢেকে যেতে দেখছি
প্রেম, প্রকৃতি, ভালোবাসা…
আর ভাবছি— মানুষ কেন মানুষকে ছেড়ে যায়
এটা সত্যিই ভাববার মতো একটা বিষয়।
তাঁকে পাঠের শুরু থেকেই আমার একটা খোঁজ ছিল নিজের কাছে। কোনোভাবে কি তিনি ভাস্কর দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন? সুমিতেশের কাছের কয়েকজনের কাছেও আমার আত্মানুসন্ধান ছিল। সেদিন বাসবীদিকে (বাসবী চক্রবর্তী, ভাস্করপত্নী) জিজ্ঞাসা করেই ফেলি, সুমিতেশ সরকারের সঙ্গে ভাস্কর বাবুর কেমন সম্পর্ক ছিল, জানো? ভাস্কর চক্রবর্তী নিজেও ছিলেন রাণাঘাটের জামাই। যাইহোক, একজন অগ্রজ কবির দ্বারা প্রভাবিত হওয়াটা কোনো অপরাধ বলে মনে হয় না। তবে সুমিতেশের একটা নিজস্ব জগৎ ছিল। যে জগৎটাকে তৈরি করেছিলেন নিজেই। তাঁকে ‘detection’-এর জন্য আলাদা করে আতস কাচের প্রয়োজন পড়ে না।
৩
তখন তিনি কর্কটরোগে আক্রান্ত। শ্রেষ্ঠ কবিতার ভূমিকায় লিখছেন— “মুরশিদ জানেন— নাছোড় কর্কটরোগের মুখোমুখি— বাইরের পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন একজন মানুষের এ-নিজেকে একটু অন্যভাবে আবিষ্কারের এক সামান্য প্রয়াসমাত্র। মৃত্যুকে অপারেশন-থিয়েটারের দরজায় দাঁড় করিয়ে রেখে— গাঢ় অ্যানেস্থেশিয়ার গভীরে ডুবে যেতে যেতে, পেরিয়ে আসা সময়ের প্রেক্ষিতে এ-এক নির্জন অভিযাত্রা। নিজেকে ফিরে দেখবার এক ভিন্নমাত্রিক তাগিদ ছাড়া, অন্য কোনও উদ্দেশ্যে এসবের অলক্ষ্যে নেই।”
মৃত্যুই কি আমাদের জীবনসার্কাসের সেরা খেলা? এই খেলার জন্যই কি আমরা অপেক্ষা করি? আমাদের ভিতর ক্রমাগত হাততালি পড়তে পড়তে যখন হাতগুলো অদৃশ্য হয়ে যায় তখন আমরা কোন মঞ্চের জন্য অপেক্ষা করি? আলো নিভে যায়। আলো জ্বলে ওঠে দপ করে। বাতাসে ভেসে বেড়ায় অঙ্গার আর অঙ্গার!
“মৃত্যু খুব কাছে এসে দাঁড়িয়ে ছিল আমার—/ এত কাছে,/ যে তার প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ/ আমি নিবিড়ভাবে অনুভব করতে পারছিলাম” — যখন মৃত্যু কারো দরজার সামনে এসে এভাবে কড়া নামে তখন দরজার ওপারের মানুষটি কীভাবে বলতে পারেন—
“বৃষ্টি হোক বা না হোক
ভালো থাকবেন
বিষাদ দূরে সরিয়ে, মনখারাপ দূরে সরিয়ে
ভালো থাকবেন”
এটাই বোধহয় সুমিতেশ ও সুমিতেশের কবিতার প্রাণশক্তি। যা বয়ে যেতে পারে যুগ যুগ বছর।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা:
গৌতম চট্টোপাধ্যায়
সঞ্জয় মৌলিক
রণজিৎ অধিকারী