ভি ন দে শে । পর্ব ৪
সম্প্রতি ‘ইতিকথা পাবলিকেশন’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে কবি ঈশিতা ভাদুড়ীর একটি অসাধারণ দু’ ফর্মার ভ্রমণ বিষয়ক গদ্যগ্রন্থ ‘ভিনদেশে’। একাধিক বিদেশ ভ্রমণের টুকরো অভিজ্ঞতার কিছু অংশ তিনি তুলে ধরেছেন সেখানে। এখানে প্রতি পর্বে আমরা জানব তাঁর তেমনই আরও কিছু দারুণ অভিজ্ঞতার কথা।
প্রথমবার প্যারিসে যেমন নির্ঝঞ্ঝাটে পৌঁছোতে পেরেছিলাম, দ্বিতীয়বারে কিন্তু নানা বিপত্তি। লন্ডন থেকে ইউরোস্টার ট্রেনে করে প্যারিস নর্থ স্টেশনে নেমে, ইংরেজি প্রশ্নের ফরাসী উত্তরে স্তব্ধ-ভাব পার করে নিজেরা কিছুটা বুঝে কিছুটা আন্দাজেই দু’দিনের একটি কম্বাইন্ড্ টিকিট কেটে তাকিয়ে দেখি একদম ফাঁকা স্টেশন, চারপাশে আমরা ছাড়া আরো দু’চারজনই মাত্র।
আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশনে যাওয়ার জন্যে মালপত্র নিয়ে বার হতে গিয়ে আর বার হতে পারি না, সে মহা বিপত্তি। গেটগুলি স্লাইডিং, টিকিট মেশিনে ঢোকালে দরজা খুলে যায় এবং তখন চট্জলদি বার হয়ে যেতে হয়। সে দরজা এতই অল্প সময়ের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় যে, মালপত্র বার করার কোনোই উপায় নেই। বুঝুন কাণ্ড! কী ভয়ানক বিপদ! এমনই অ্যাডভান্স্ড্ দেশ! এতই তাদের প্রগতি! এমনই তাদের ব্যবস্থাপনা!
সোমা বার হয়ে গেছে আর আমি কাঁড়ি কাঁড়ি মাল নিয়ে বন্ধ দরজার এপাশে দাঁড়িয়ে। চারপাশে রেলের কোনো কাউন্টার অথবা কোনো মানুষই নেই যে বিপদ থেকে উদ্ধার হওয়ার পথ বলে দেবে। রবীন্দ্রনাথ কী এই গেটের সামনে এসেই লিখেছিলেন “খোলো খোলো দ্বার, রাখিও না আর / বাহিরে আমায় দাঁড়ায়ে / দাও সাড়া দাও”!
আমাদের পাশে এশীয় দু’টি যুবক-যুবতীরও এই এক দশা শেষমেষ সেই যুবক প্রবলতম শক্তিক্ষয়ে দরজা ঠেলে তার সঙ্গিনীকে বার করল এবং তারপর মালপত্র সহ আমাকে। নিশ্চয়ই সে খেলাধুলো করেছে অনেক, তাই না পারল! ভাগ্যিস সেই যুবক ছিল! ভাগ্যিস তার সঙ্গিনীও আটকে পড়েছিল!